নরসিংদীর মাধবদীতে নিজের বসতঘরে নির্মল দেবনাথ (৪৫) নামে এক মিষ্টির কারিগর খুনের ঘটনার প্রায় ৪ মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে নরসিংদীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
খুনের সময় নির্মল দেবনাথের খোয়া যাওয়া বাটন মোবাইলটি চারজনের হাতবদল হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে সচল হয়। এক এক করে সর্বশেষ ব্যক্তির কাছে পৌঁছাতেই বেরিয়ে আসে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।
নিহত নির্মল দেবনাথ মাধবদী পৌর শহরের জলখাবার মিষ্টি দোকানের কারিগর ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের সরারচর কোতালিয়া এলাকার রঞ্জিত দেবনাথের ছেলে। তিনি দক্ষিণ বিরামপুরে নিজ মালিকানাধীন একটি একতলা বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি মো. এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, গত ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার ভাই ফোটা উপলক্ষে সন্তানদের নিয়ে শিবপুরের শাষপুর এলাকায় বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান নির্মল দেবনাথ এর স্ত্রী মনি দেবনাথ। ঐ রাতে তারা বাড়ি না ফেরায় নির্মল দেবনাথ নিজ বাড়িতে একাই ছিলেন। পরীক্ষা থাকায় তাঁর ছেলে স্কুলছাত্র অর্থ দেবনাথ পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে ৯ টায় বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফিরে সে ঘরের দরজা খোলা অবস্থায় দেখতে পায় এবং খাটে পিতা নির্মল দেবনাথের গলাকাটা রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। এসময় ঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পাওয়া যায়।
কে বা কারা নির্মল দেবনাথকে খুন করে তার ব্যবহৃত সিম্ফোনি বাটন মোবাইলটি নিয়ে যায়। এঘটনায় ভুক্তভোগীর ছেলে দুর্জয় দেবনাথ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মাধবদী থানায় মামলা করেন। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গত ৩১ ডিসেম্বর মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।
এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, ‘মামলাটির তদন্তে নেমে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভুক্তভোগী নির্মল দেবনাথের মোবাইল ফোন উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করা হয়। একপর্যায়ে জানা যায় মোবাইলটি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর থানা এলাকায় সচল রয়েছে। গত ১ মার্চ দুপুরে ঠাকুরগাঁও থেকে লাইলী খাতুন নামে একজনকে ওই মোবাইলসহ আটক করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইলের বিষয়ে লাইলী জানায় মাধবদী এলাকায় চাকরি করার সময় শাকিল নামের এক ছেলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। শাকিল তাঁকে মোবাইলটি দিয়েছিল। পরে শাকিলকে নরসিংদী থেকে আটক করা হলে সে জানায়, রবিন নামে একজনের কাছ থেকে ২৫০ টাকায় মোবাইলটি কিনেছিল সে। একপর্যায়ে রবিনকে আটক করলে সে জানায়, প্রায় তিন মাস আগে মোবাইলটি তার ফুফাতো ভাই মাসুম বিল্লা তাকে বিক্রির জন্য দেয়। পরে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। গত ৬ মার্চ মাধবদী থেকে মাসুম বিল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার মাসুম বিল্লা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে।’
মাসুম বিল্লার দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. এনায়েত হোসেন বলেন, ‘গত ১৪ নভেম্বর রাত তিনটার দিকে চুরির উদ্দেশ্যে বাড়ির ছাদে উঠে গেট দিয়ে নির্মল দেবনাথের বাড়িতে প্রবেশ করে। এসময় ঘুমন্ত নির্মলের মোবাইল ও মানিব্যাগটি নিয়ে নেয় সে। একপর্যায়ে ঘুম ভেঙে গেলে নির্মল বটি নিয়ে চোরকে ধাওয়া করে। ধারালো বটি হাতে মাসুম বিল্লার দিকে এগিয়ে গেলে, সে তার হাত ধরে ফেলে। এরপর তাদের মধ্যে প্রায় ২০ মিনিট ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে মাসুম বিল্লা নির্মলের হাতে থাকা বটি কেড়ে নেয় এবং এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।’