ভারতীয় উৎস থেকে সংগৃহীত ৫২৭ খাদ্যপণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি (ইএফএসএ)। এ খবর এমন সময় প্রকাশ পেল যখন এমডিএইচ, এভারেস্টসহ কয়েকটি ভারতীয় মসলা ব্র্যান্ডের পণ্যে অনুমোদিতের চেয়ে বেশি মাত্রায় ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে। এ অভিযোগে এরই মধ্যে হংকং ও সিঙ্গাপুরে এসব ব্র্যান্ডের পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। বর্তমানে ৫২৭ পণ্যে ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একই ধরনের পদক্ষেপ পণ্যগুলোর দূষণের বিস্তৃতিকে আবারো সামনে নিয়ে এসেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া। 

This image has an empty alt attribute; its file name is nodi-bangla-300x250-2.png
নদী বাংলা
011-1549×2048
363368436_141139085679773_1563588500978520913_n
354855237_3476818889199283_7628006365365579504_n
previous arrow
next arrow

খাদ্যপণ্যে এ ধরনের দূষিত পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমদানি-রফতানীকৃত খাদ্যপণ্যের নিরাপদ মান ও সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ইথিলিন অক্সাইড ইইউ অঞ্চলে খাবারে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত নয়। আগেও রাসায়নিকটির উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ায় ৮৭টি চালান ইইউ অঞ্চলের সীমান্ত থেকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। বেশকিছু পণ্য বাজার থেকে সরিয়েও ফেলা হয়েছে। 

ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়া ৫২৭ পণ্যের মধ্যে ৫২৫টি ভোক্তা খাদ্যপণ্য ও দুটি প্রাণিখাদ্য। এসব পণ্যের মধ্যে ৩৩২টির একক উৎস ভারত। বাকিগুলোর উৎস হিসেবে ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশের নামও ট্যাগ করা রয়েছে।

ইএফএসএ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির বেশকিছু খাদ্যপণ্যের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। পণ্যগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই বাদাম ও তিলবীজ (৩১৩টি), ভেষজ ও মসলা (৬০টি), ডায়েট খাদ্য (৪৮টি) ও অন্যান্য (৩৪) ক্যাটাগরির খাদ্যপণ্য। পরীক্ষায় এসব পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যকে ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যার ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইইউ। 

ইথিলিন অক্সাইড মূলত একধরনের বর্ণহীন গ্যাস। এটি সাধারণত কীটনাশক হিসেবে ও স্টেরিলাইজিং এজেন্ট (জীবাণুমুক্তকারী) হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর উদ্ভাবন হয়েছিল মূলত চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে। যদিও এক পর্যায়ে কৃষি খাতেও এর ব্যবহার শুরু হয়। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) ইথিলিন অক্সাইডকে গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন (ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান) হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। 

খাদ্যপণ্যে ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতিকে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, খাদ্যে এর উপস্থিতি ইথিলিন গ্লাইকোলের মতো উপজাতের সৃষ্টি করতে পারে। কাশির সিরাপে ইথিলিন গ্লাইকোলের কারণে আফ্রিকায় শিশুমৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। ইইউ খাদ্যপণ্যে ইথিলিন অক্সাইডের নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজিতে দশমিক ১ মিলিগ্রাম। কিন্তু ভারতীয় কিছু খাদ্যপণ্যে এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে অনুমোদিত এ মাত্রার চেয়ে বেশি। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাসায়নিকটির সংস্রব লিম্ফোমা, লিউকেমিয়াসহ নানা ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। রাসায়নিকটির ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করার সক্ষমতাই একে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধিকারী উপাদানে রূপ দিয়েছে। এর প্রভাব তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ধরনেরই হতে পারে। শুধু খাদ্য হিসেবে গ্রহণ নয়, এতে দূষিত পণ্য নাড়াচাড়ার মাধ্যমেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। 

ভারতীয় খাদ্যপণ্যে ইইউ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক শনাক্ত করার পর বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই)। যেসব মসলা ও খাদ্যপণ্যে রাসায়নিকটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর নিরাপত্তা মান নিশ্চিতে ব্যাপকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে সংস্থাটি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নিরাপদ খাদ্য ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধতার জায়গা থেকে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে এফএসএসএআই। ভারতীয় অনেক খাদ্যপণ্যে ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো সামনে আসায় এখন খাদ্য সংরক্ষণ ও জীবাণুমুক্তকরণে নিরাপদ বিকল্পের সন্ধান চালাচ্ছে সংস্থাটি। দেশটিতে এখন ইথিলিন অক্সাইডের বিকল্প হিসেবে গামা রশ্মি ব্যবহারের আলোচনা হচ্ছে। এর মাধ্যমে খাদ্যপণ্যে রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়াই প্যাথোজেন ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *