ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারওয়ান বাজার অংশের র্যাম্প ফেব্রুয়ারিতেই চালু হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিমানবন্দর থেকে আসা গাড়িগুলো সরাসরি নামতে পারবে এফডিসির গেটের সামনের সড়কে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ পয়েন্টে নতুন করে এ র্যাম্প চালুর আগেই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিকল্পনা করার পরামর্শ দিয়েছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ।
এক্সপ্রেসওয়ে আংশিক চালুর মাধ্যমে এরইমধ্যে যানজটের নগরে গতির দেখা পেয়েছে নগরবাসী। প্রাথমিকভাবে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশের আংশিক চালু হলেও এ পথটুকুতেই মিলেছে স্বাচ্ছন্দ্য।
এবার এ পথে আরও একটি র্যাম্পের কাজও শেষ হচ্ছে। অর্থাৎ ফার্মগেটের পর এবার চালু হচ্ছে কারওয়ান বাজারে নামার পথ। তেজগাঁও থেকে তাহলে সরাসরি এসে নামা যাবে কারওয়ানবাজার রেল ক্রসিংয়ের পর এফডিসি গেটের সামনে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এতে করে দক্ষিণমুখী গাড়ি চলাচল বাড়বে। আরও বেশি পরিবহন আসবে এক্সপ্রেসের সুবিধায়। যদিও এই প্রান্তে কেবল নামার ব্যবস্থাই থাকবে। উঠতে হলে অপেক্ষা করতে হবে পলাশী র্যাম চালু হওয়া পর্যন্ত। সেই অংশের উঠা-নামার ব্যবস্থা করতে এরইমধ্যে শুরু হয়েছে কাজ। তবে নতুন এই নামার পথটা আগামী মাসেই চালুর পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিডি এ এইচ এম সাখাওয়াত আকতার বলেন, এফডিসির গেটের সামনে সড়কে যে র্যাম্পটা নামবে, তার কাজ শেষের ভাগে চলে এসেছি। কিছুদিনের মধ্যে হয়ত আমরা এটি ছেড়ে দিতে পারবো গাড়ি চলাচলের জন্য। এ অংশটি যদি আমরা চালু করে দিতে পারি, তাহলে ফার্মগেটে যে অংশটায় যারা আছেন তখন ৫০ ভাগ ট্রাফিক, এদিকে চলে আসবেন।
এরইমধ্যে র্যামের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। সংযোগ সড়কের কাজও চলছে পুরোদমে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ বলেন, এফডিসির গেটের সামনে সড়কে যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নামানো হবে, এখানে যে ইন্টার সেকশন রয়েছে আগে এবং পরে সেগুলো ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কো অর্ডিনেশন থাকতে হবে। যদি না থাকে তাহলে হলে দেখা যাবে, এই সড়ক দিয়ে গাড়ি নামাতে পারবো ঠিকই কিন্তু আবার যানজট তৈরি করে ফেলবে।
পাশপাশি হাতিরপুল সড়ক হয়ে, কাঁটাবন, নীলক্ষেত হয়ে পলাশীর মতো ব্যস্ততম সড়কে যখন র্যাম বসানোর কাজ চলবে তখনও ট্রাফিক নিয়ে বিকল্প পরিকল্পনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
গতবছরের ২ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ফেইজ হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনে থেকে ফার্মগেট প্রান্ত অংশ পর্যন্ত যান চলাচলের উদ্বোধন করা হয়। এই পথের দূরত্ব দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ এই পথের মোট দৈর্ঘ্য ২২.৫ কিলোমিটার। ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে র্যাম্প রয়েছে ১৫টি। র্যাম্পগুলো হচ্ছে— বিমানবন্দরে ২টি, কুড়িলে ৩টি, বনানীতে ৪টি, মহাখালীতে ৩টি, বিজয় সরণিতে ২টি এবং ফার্মগেটে ১টি। ১৫টির মধ্যে ১৩টি র্যাম্প প্রাথমিকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
রাজধানীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করবে এক্সপ্রেসওয়েটি।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে। এই প্রকল্পের নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে- বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে এই প্রকল্প। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনের জন্য এটিই হচ্ছে সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
চলমান অগ্রগতি
প্রথম ধাপের এয়ারপোর্ট-বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত অগ্রগতি ৫৬ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপের বনানী রেলস্টেশন-মগবাজার ও তৃতীয় ধাপের মগবাজার-চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রস্তুতিমূলক কাজ চলমান। ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ পরীক্ষামূলক পাইলিং উদ্বোধন করা হয়।