অসত্য তথ্য দিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা ও অনুমোদন ছাড়া পণ্য বিক্রির অভিযোগে দেশের পাঁচটি শিল্পগোষ্ঠীর মালিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত) এ পরোয়ানা জারি করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মোহা. কামরুল হাসান বাদি হয়ে আজ এ মামলা করেন। আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর তিনি সাংবাদিকদের জানান, যে পাঁচ শিল্পগোষ্ঠীর মালিক–কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, সেগুলো হলো একমি বেভারেজ লিমিটেড, প্রাণ ডেইরি লিমিটেড, মেসার্স আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, দেশবন্ধু ফুড বেভারেজ লিমিটেড ও ব্রুভানা বেভারেজ লিমিটেড।

This image has an empty alt attribute; its file name is nodi-bangla-300x250-2.png
নদী বাংলা
011-1549×2048
363368436_141139085679773_1563588500978520913_n
354855237_3476818889199283_7628006365365579504_n
previous arrow
next arrow

কামরুল হাসান বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নামে কোমল পানীয় বিক্রি করে আসছিল। পানীয় বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব কথা ভোক্তাদের বলছে, তাতে তাঁর মনে হয়েছে, এগুলো একধরনের ওষুধ। তিনি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে খবর নিয়ে জানতে পারেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে এসব পানীয়র অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এরপর তিনি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনে (বিএসটিআই) গিয়ে জানতে পারেন, সংস্থাটিও এসব পণ্যের অনুমোদেন দেয়নি। এরপরই তিনি বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলা করেন।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি এসব পণ্যের অনুমোদনপ্রক্রিয়া ঠিকভাবে হয়েছে কি না, আগামী ৫ ও ৯ জুন তা আদালতকে জানাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান কামরুল হাসান।

এসএমসি প্লাস অরেঞ্জ ফ্লেভার ড্রিংক নামে একমি বেভারেজ, অরেঞ্জ রিভাইড ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক নামে দেশবন্ধু ফুড বেভারেজ, অ্যাকটিভ প্লাস ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক অরেঞ্জ ও লেমন ফ্লেভার্ড নামে প্রাণ ডেইরি, টারবো ইলেক্ট্রোলাইট স্পোর্টস ড্রিংক নামে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এবং ব্রুভানা স্পোর্টস প্লাস ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক নামে পানীয় বিক্রি করছে ব্রুভানা বেভারেজ।

কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদন না নিয়েই এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। পণ্যের প্রচারে বা মোড়কে বলা হচ্ছে, এই পানীয় খেলে পানিশূন্যতা দূর হয়, রক্তচাপের জন্য উপকারী। খেলাধুলা ও ব্যায়ামের ক্লান্তি দূর করে। এটি শক্তি জোগায়, কর্মদক্ষতা বাড়ায় ও দেহে পানির পরিমাণ ঠিক রাখে। কামরুল ইসলাম বলেন, এসব পানীয়র মোড়কে বিভিন্ন রোগ নিয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে, যা নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ ও নিরাপদ খাদ্য (মোড়কাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং) প্রবিধানমালা, ২০১৭–এর সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।

এরই মধ্যে দেশের জনপ্রিয় ইউটিউবার রাফসান দ্য ছোটভাই খ্যাত ইফতেখার রাফসানের অননুমোদিত ব্লু ড্রিংকস কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় নোংরা পরিবেশে মান নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ‘ব্লু’ ড্রিংকস তৈরি করায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত ২৪ এপ্রিল কুমিল্লা নগরীর বিসিক এলাকায় অবস্থিত মেসার্স ব্লু ড্রিংকসে অভিযান পরিচালনা করা হয়। শুক্রবার (১৭ মে) ওই খবরটি নতুন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে।

মেসার্স ড্রিংক ব্লু বেভারেজ, কুমিল্লা সদর উপজেলার সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিসিক শিল্পনগরী বি-৩৩ ব্লকে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি মোড়কজাতকরণ নিবন্ধন সনদ গ্রহণ না করে ‘ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক’ পণ্য প্রস্তুত করে আসছিল। এছাড়া কোন অটোমেশন মেশিন না থাকার পাশাপাশি নোংরা পরিবেশে নারী কর্মীদের মাধ্যমে কোনো নিরাপত্তা কিংবা ড্রেস কোড ছাড়াই এই ব্লু নামক ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস প্রস্তুত হচ্ছিল। কারখানাটি ‘রাফসান দ্য ছোটভাই’ খ্যাত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইফতেখার রাফসান পরিচালনা করেন।

এদিকে কারখানায় কোনো পরিমাপ যন্ত্র না থাকায় হাতে করে বোতলজাত করা হচ্ছিল এই ডি্রংকগুলো। নিবন্ধন ছাড়াই মোড়কজাত ও বাজারজাত করায়  ‘ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইন -২০১৮’ এর ৪১ ধারায় ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ফারহানা নাসরিন এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএসটিআই, কুমিল্লা অফিসের কর্মকর্তা আরিফ উদ্দিন পি্রয়, পরিদর্শক (মেটে্রালজি) এবং সার্বিক সহযোগিতা করেন ইকবাল আহাম্মদ, ফিল্ড অফিসার (সিএম)।

গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ব্লু নামে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক ব্লু বাজারজাত করার ঘোষণা দেয় আলোচিত ইউটিউবার রাফসান, যিনি রাফসান দ্য ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত। তখন লিচু ও তরমুজের ফ্লেভার নিয়ে দুই ক্যাটাগরিতে তারা দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে বাজারজাত শুরু করে। মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং ও ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের সহায়তায় তারা এই পণ্য বাজারজাত করে। বিশ্বখ্যাত ইনফ্লুয়েন্সার লোগান পল ও কেএসআই’র ডি্রংক ‘প্রাইম’ এর মার্কেটিং স্ট্যাটেজির অনুপে্ররণায় রাফসানের ‘ব্লু’ বাজারজাত হচ্ছিল। 

তবে শুরু থেকেই এই পণ্যটি কুমিল্লা বিসিকে আধুনিক যন্ত্রপাতি, রসায়নবিদ না থাকার পাশাপাশি সফট ড্রিংকস স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রস্তুত করার কোন ব্যবস্থাই ছিল না। এরই মধ্যে সম্প্রতি ‘ব্লু’  লেবুর ফ্লেভার বাজারজাত করছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *