বাংলাদেশে সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে। এসব অগ্নিকাণ্ড ঘটছে মূলত সিলিন্ডারের ত্রুটিপূর্ণ ভালভ ও রেগুলেটরের কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ব্যবহৃত সিলিন্ডারের ভালভ ও রেগুলেটরের মাপ দুই রকমের। ভিন্ন মাপের রেগুলেটর ও ভালভ যুক্ত হলে গ্যাস লিকেজের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সিলিন্ডার থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড কমাতে হলে একই মাপের ভালভ ও রেগুলেটরের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সিলিন্ডারের হোস পাইপের মানও।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে সারা দেশে চুলা (ইলেকট্রিক, গ্যাস, মাটির চুলা ইত্যাদি) থেকে ৪ হাজার ১৭৫টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। গ্যাস সিলিন্ডার ও বয়লার বিস্ফোরণ থেকে ঘটে ১২৫টি। ২০২২ সালে চুলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৩৮। গ্যাস সিলিন্ডার ও বয়লার বিস্ফোরণ থেকে ঘটে ৯৪টি।
দেশে বর্তমানে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) আমদানি করে ২০টি কোম্পানি। আর বিপণনে যুক্ত প্রায় ৩০টি কোম্পানি। যেসব কোম্পানির বয়স ১০ বছরের বেশি, সেগুলোর সিলিন্ডারের মান যাচাইয়ের পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। যেগুলোর ১০ বছর হয়নি, সেগুলোর পরীক্ষাগার তৈরির বাধ্যবাধকতা নেই।
এসব পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে বিস্ফোরক পরিদপ্তর। যেসব সিলিন্ডার মান উত্তীর্ণে ব্যর্থ হয়, সেগুলো ধ্বংস করা হয়। ধ্বংস করার সময় বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন। যদিও পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে সিলিন্ডারগুলো আলাদাভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয় না। বর্তমানে দেশের বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে চার-পাঁচটির বয়স ১০ বছরের বেশি। এগুলোর নিজস্ব পরীক্ষাগার রয়েছে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলছে, এলপিজি যে চাপ তৈরি করে, তার চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ চাপ ধারণ করার ক্ষমতা সিলিন্ডারের থাকে। ফলে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের তেমন কোনো আশঙ্কা থাকে না। যেসব অগ্নিকাণ্ড ঘটছে, সেগুলোর মূল কারণ গ্যাস লিকেজ।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের উপপ্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মনিরা ইয়াসমিন বলেন, ‘সিলিন্ডার নিম্নমানের হওয়ায় বিস্ফোরণ হয়েছে, এমন ঘটনা খুবই কম। বিস্ফোরণ ঘটে মূলত গ্যাস লিকেজের কারণে।’
সিলিন্ডারের মানের বিষয়ে মনিরা ইয়াসমিন বলেন, ‘যখন আমদানি করা হয় তখন বিষয়টি পর্যবেক্ষণে একটি নিরপেক্ষ সংস্থা নিয়োগ দেয়া হয়। তারা সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করেন। এর সঙ্গে ১০ বছর পরপর যে পরীক্ষা পদ্ধতি, সেটির কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা পত্রিকায় মানুষকে সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক করার জন্য নানা বিজ্ঞাপন দিচ্ছি।’
জেএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘দেশে ব্যবহৃত সিলিন্ডারের ভালভ ও রেগুলেটরের মাপ দুই রকমের। একটি ২২, আরেকটি ২০ মিলিমিটার। যখন ২২ মিলিমিটারের রেগুলেটর ২০ মিলিমিটারের ভালভের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তখন দুই মিলিমিটার ফাঁকা থাকায় গ্যাস লিকেজ হয়।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য দেশে ভালভ ও রেগুলেটরের যেকোনো একটা মাপ অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দুটির অনুমোদন থাকায় ঘটছে বিপত্তি। যারা দোকান থেকে সিলিন্ডার বদল করে আনেন, তাদের অনেকেরই ঘরে থাকা রেগুলেটরের মাপ জানা থাকে না।
লিয়াকত আলী বলেন, ‘দেশে সিলিন্ডারের ভালভ ও রেগুলেটরের যেকোনো একটি মাপ অনুমোদন দেয়া উচিত। দুটি মাপ থাকায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া গ্যাসকেট ও “ও রিং”-এর মান নিয়ে আরো সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে নীতিমালা করা এবং সেটি বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই।’